সালটা ২০০৫। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইউটিউব খোলার পিছনে সবচেয়ে বড় মাথা ছিল কম্পিউটার-জাদুকর জাভেদেরই, হারলি আর চ্যান বেশি দেখতেন ব্যবসায়িক দিকটা। সে জন্যই বেশি লোকে জানত না জাভেদের নাম। তিনি নিজেও বলেছিলেন, কোম্পানির অ-সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে থাকাই তার বেশি পছন্দ। তিন বন্ধু যখন ২০০৬-এ বিপুল দামে ইউটিউব বিক্রি করে দেন গুগলের কাছে, তখন টেক-দুনিয়া শেষমেশ জানতে পারে জাভেদ করিমের নাম…
২০০৫ সালে জাভেদ করিম, সাদ হারলি ও স্টিভ চ্যান মিলে জনপ্রিয় ভিডিও বিনিময় ওয়েবসাইট ইউটিউব তৈরি করেন। বর্তমানে ভিডিও আপলোড ও প্লের জন্য বিশ্বের সেরা সাইটে পরিণত হয়েছে ইউটিউব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি গ্রাহক বৃহত্তম এই ভিডিও আপলোডিং সাইট ইউটিউব ব্যবহার করছেন। বিশ্বের তরুণ সমাজে অনুপ্রেরণীয় তারকাদের তালিকায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশি বংশোদূত জাভেদ করিম। তিনি ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল কাজে জড়িত ছিলেন।
প্রযুক্তি বিষয়ে তার বিশেষ আকর্ষণ কাজ করত। ইউটিউব ছাড়াও তিনি পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রিডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবোটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক ২ মডেল ভিউয়ারসহ বেশ কিছু প্রজেক্টের উদ্ভাবন করেছেন। জাভেদ করিমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা Bangladesh Pratidinজার্মানিতে।
১৯৯২ সালে তারা সপরিবারে আমেরিকায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তারা আমেরিকার বাসিন্দা। সাবেক পশ্চিম জার্মানির নয়েসে বেড়ে ওঠা হলেও বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়ে ১৯৯২-তে মা-বাবার সঙ্গে চলে যেতে বাধ্য হন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায়। ইউটিউবের ইতিহাসে ‘মি অ্যাট দ্য জু’ নামে প্রথম ভিডিও আপলোড করেছিলেন এই জাভেদই, ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিলে। এখনো পর্যন্ত ৬.১ কোটি মানুষ দেখেছেন সে ভিডিও।
১৯৯৮ সালেই সিলিকন গ্রাফিক্সে ইন্টার্নশিপ করে ব্যবসায় কিছুটা হাত পাকিয়েছিলেন করিম। কিন্তু এক কাজে বেশি দিন টিকে থাকার মতো মানসিকতাই ছিল না জাভেদের। ২০০০ সালে হঠাৎই মাথার পোকা নড়ে উঠল ছাত্র জাভেদের। গ্র্যাজুয়েশনের ঠিক আগে ক্যাম্পাস ছেড়ে হাওয়া হয়ে গেলেন তিনি, নাম লেখালেন পেপ্যালে। সব সময় নতুন কিছু করার নেশায় মেতে থাকা, প্রযুক্তি-পাগল ছেলেটার মন ওঠেনি শুধু পেপ্যালে কাজ করে। তবে একটা ব্যাপারে শাপে বর হয়েছিল। পেপ্যালে কাজ করার সময়ই জাভেদের আলাপ হয় সাদ হারলি আর স্টিভ চ্যানের সঙ্গে।
তখন থেকেই তিন বন্ধু মিলে ভেবেছিলেন, কত ধরনের ভিডিও আছে নতুন-পুরনো- গান-খেলা-সিনেমা-ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আরও কত কী! সেগুলোকে তুলে ধরার একটা প্ল্যাটফরম যদি বানানো যায়! যেমন ভাবা, তেমন কাজ। প্রযুক্তিতে ‘প্যারাডাইম শিফট’ এনে সৃষ্টি হলো ইউটিউবের। সালটা ২০০৫। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইউটিউব খোলার পেছনে সবচেয়ে বড় মাথা ছিল কম্পিউটার-জাদুকর জাভেদেরই, হারলি আর চ্যান বেশি দেখতেন ব্যবসায়িক দিকটা। সে জন্যই বেশি লোকে জানত না জাভেদের নাম।
তিনি নিজেও বলেছিলেন, কোম্পানির অ-সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে থাকাই তাঁর বেশি পছন্দ। তিন বন্ধু যখন ২০০৬-এ বিপুল দামে ইউটিউব বিক্রি করে দেন গুগলের কাছে, তখন টেক-দুনিয়া শেষমেশ জানতে পারে জাভেদ করিমের নাম। সংস্থায় তাঁর শেয়ারও ছিল চ্যান-হারলির চেয়ে কম, তাই ‘বেশি’ লাভ করতে পারেননি। কুড়িয়ে-বাড়িয়ে যা পেয়েছিলেন, তার পরিমাণ আজকের বাজারে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন ডলার! পড়াশোনা শেষ করবেন বলেই ইউটিউবের সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলতে রাজি হননি এই বিরল মস্তিষ্ক।
পরে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করার সুযোগটাও ছাড়েননি। ওয়াল স্ট্রিটের কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, এয়ারবিএনবি নামে যে হোমস্টে সংস্থা সারা বিশ্বে নাম কিনেছে, তাতে জাভেদের শেয়ার আছে তো বটেই, তিনিই এর নেপথ্যে মূল মাথা। নিজে প্রযুক্তিবিদ, কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে প্রবল অনীহা ৪০ বছরের এই যুবকের। ফেসবুক-টুইটার ব্যবহার করেন না, নেই ইনস্টাগ্রাম-ফ্লিকারেও। নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকলেও, সেখানে পোস্ট করেন কালেভদ্রে।